দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যেতে পারছেন না, কারণ ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার উপক্রম। সম্প্রতি, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস দিল্লিতে অবস্থিত। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা, যারা মূলত ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, গ্রিসসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তারা এই সমস্যায় পড়েছেন।
গত প্রায় চার মাস ধরে ভারতের ভিসা কার্যক্রম সীমিত। অনেক শিক্ষার্থী, যারা উচ্চশিক্ষার জন্য ইউরোপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, এখন ভিসা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। এই সমস্যার মূল কারণ হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অধিকাংশ দেশের দূতাবাস ভারতীয় রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত। ভারতীয় ভিসা জটিলতা এবং সশরীরে উপস্থিতি ছাড়া ভিসা দেয়ার শর্তের কারণে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভিসা পেতে সমস্যায় পড়েছেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর দূতাবাসগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সশরীরে উপস্থিতি ছাড়া ভিসা দেওয়া সম্ভব নয়।
এ অবস্থায়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ও তাদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকার এবং ইউরোপীয় কূটনীতিকদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় অথবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করা হয়। গত সোমবার, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের ইউরোপীয় কূটনৈতিক দলের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এই বিষয়টি আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সমস্যার সমাধানের জন্য এই অনুরোধ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ইউনেসকো, ফ্যাকড-ক্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ৪৪ হাজার ৩৩৮। তবে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এখনও কম। ২০২৩ সালে ভারত থেকে ৫ লাখ ৮ হাজার ১৭৪, নেপাল থেকে ৮৮ হাজার ৯০৪ এবং পাকিস্তান থেকে ৭১ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী বিদেশে গেছেন।
বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন—৮ হাজার ৫২৪ জন। এছাড়া যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং অন্যান্য দেশেও শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে গেছেন। তবে, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশে শিক্ষার্থী যাওয়ার ক্ষেত্রে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেছেন, বিশেষত ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল, এবং গ্রিসে। কিন্তু, এসব দেশের দূতাবাস ভারতীয় রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত, এবং সশরীরে উপস্থিতি ছাড়া ভিসা প্রদান সম্ভব নয়।
ফ্যাকড-ক্যাব, যা বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর কনসালটেন্সি এজেন্সির সংগঠন, জানিয়েছে, তারা এসব দেশগুলোর দূতাবাসে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে, ভারতের ভিসা সমস্যার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ইউরোপে যেতে পারছেন না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে ভারতের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কিন্তু এখনও কোনো সমাধান আসেনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হাইকমিশন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারতীয় দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে, ঢাকায় ভিসা সেন্টার স্থানান্তর বা প্রতিবেশী দেশগুলোর ভিসা সেন্টার থেকে এই সমস্যার সমাধান চাওয়া হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এই বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ সময়েই ভারতে গিয়ে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
ভিসা জটিলতা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা এবং ইউরোপীয় দূতাবাসগুলোর সশরীরে উপস্থিতির শর্তের কারণে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী তাদের উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনা পূর্ণ করতে পারছেন না। এ সমস্যার সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছ থেকে দ্রুত একটি কার্যকর সমাধান আশা করা যাচ্ছে।