ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসে সক্ষম এমন এক শক্তিশালী অস্ত্র এখনো ব্যবহার হয়নি। এর নাম ‘জিবিইউ-৫৭এ/বি ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি)—একটি বিশাল ‘বাংকার ব্লাস্টার’ বোমা যা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এখনো ইসরায়েলের নাগালের বাইরে।
এটি পারমাণবিক নয়, বরং একটি নন-নিউক্লিয়ার সুপার-হেভি বোমা। যার ওজন ৩০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ১৩,৬০০ কেজি)। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং গভীর-আঘাত হানতে সক্ষম বোমাগুলোর একটি, যা ২০০ ফুট বা ৬১ মিটার মাটির নিচে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
এই বোমা নির্মাণ করেছে বোয়িং। এটি এমনভাবে তৈরি যাতে শক্ত ধাতব খোলসে মোড়ানো বিস্ফোরক অংশ গভীর বাংকারেও কার্যকরভাবে আঘাত হানতে পারে।
এমওপি বোমা আফগানিস্তানে ব্যবহৃত এমওএবি (মাদার অফ অল বোম্বস) থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী। এমওএবি ছিল ২১,৬০০ পাউন্ড ওজনের, কিন্তু এমওপি তার চেয়ে প্রায় ৮,৪০০ পাউন্ড বেশি ভারী।
এই বোমার মূল লক্ষ্য—ভূগর্ভস্থ সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণাগার এবং সুসংরক্ষিত কমপ্লেক্স। যেমন ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা, যা ৮০ মিটার পাথর ও মাটির নিচে অবস্থিত।
বর্তমানে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের বি-টু স্পিরিট স্টিলথ বোমার এই বোমা বহনে সক্ষম। এই বিমান ৪০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে এবং একসঙ্গে দুটি এমওপি বোমা নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
বি-টু বিমান এতটাই উন্নত যে, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারে।
ইসরায়েল বহুবার জানিয়েছে যে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে দেখে এবং ফোর্দো কমপ্লেক্স তাদের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। তবে, ইসরায়েল এমওপি ব্যবহারের ক্ষমতা না থাকায় যুক্তরাষ্ট্রকেই এই অস্ত্র ব্যবহারে সম্মতি দিতে হবে।
অধ্যাপক পল রজার্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানে জড়িত না হলে ইসরায়েল এককভাবে এমওপি ব্যবহার করতে পারবে না। সব নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
এমওপি বোমা ব্যবহারে ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংস হতে পারে ঠিকই, তবে এখনও নিশ্চিত নয় ফোর্দোর প্রকৃত গভীরতা এবং প্রতিরক্ষা কতটা শক্তিশালী। এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইরান ও রাশিয়ার যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা এই ধরনের হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুত।
এমওপি বোমা হলো আধুনিক যুদ্ধ প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত, কিন্তু এর ব্যবহার এখনো রাজনৈতিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। ইসরায়েল যদি ইরানে হামলার পরিকল্পনা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আর যদি এটি ব্যবহার হয়, তাহলে তা ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় লিখবে।