২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য হাইকোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। গ্রেনেড হামলায় বিচারের রায় বাতিল করার পর, এই মামলায় আবারও নতুন করে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন আদালত।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যাতে ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। তখন ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার হামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা অভিযোগে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন সরকার মামলা চালানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। এর পরবর্তী সময়ে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলার তদন্ত নতুনভাবে শুরু করেছিল।
২০১৮ সালে ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দিয়েছিল। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে, ১ ডিসেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর এসব সাজা বাতিল হয়ে যায় এবং অনেক আসামি খালাস পায়।
এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট জানায় যে ন্যায়বিচারের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে যাতে যথাযথ ও বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে নতুন তদন্ত করা হয়। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, এই মামলায় সকল প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে তদন্তে নতুন দিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।
এর আগে, ২০১১ সালে মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পাওয়া গিয়েছিল, তবে পরবর্তীতে তা আদালতে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। গত ২০২১ সালে আবারও আলোচনায় আসে এই মামলার বিষয়, বিশেষত ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, ২০১৮ সালে গ্রেনেড হামলার মামলার নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়, এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মামলার পুনঃশুনানি শুরু হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে, ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এসব আসামির মধ্যে বিএনপির তারেক রহমান, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন।
গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারে নতুন পদক্ষেপের জন্য এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পর, মামলার তদন্তে বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে পর্যালোচনা চালানো হবে, এবং এই মামলার পরবর্তী পদক্ষেপগুলি যথাযথভাবে নেওয়া হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
মামলাটির পুনঃতদন্ত বা নতুন সিদ্ধান্তের জন্য আশা করা হচ্ছে যে, গ্রেনেড হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সকল দিক এবং আসামিদের কার্যক্রমের সঠিক মূল্যায়ন হবে, যার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।