বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারিতে জড়িত আলোচিত সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ব্যাংক হিসাবে সোয়া ৪১ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁর বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রী শাহরিন আক্তার ও ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমানের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন আজ রোববার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, তিনটি মামলাই আজ দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, আবেদ আলীর ১২টি ব্যাংক হিসাবে ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার সম্পদ তিনি জ্ঞাত আয়ের উৎসবিহীনভাবে অর্জন করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
আবেদ আলীর স্ত্রী শাহরিন আক্তারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর দুটি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা জমা এবং ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ ছাড়া আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামের বিরুদ্ধেও ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে পিএসসির বিপিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এরপর পিএসসির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সিআইডি দুদকে চিঠি পাঠায়। পরে দুদক এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত অভিযোগে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে আবেদ আলী ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই ঘটনায় পিএসসির দুই উপপরিচালক, এক সহকারী পরিচালকসহ আরও ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী স্বীকার করেন যে তিনি অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ঢাকায় তাঁর একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট, একটি প্রাইভেট কার এবং মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় একটি ডুপ্লেক্স ভবন রয়েছে।
আসামি | অভিযোগিত সম্পদ | সন্দেহজনক লেনদেন | মামলার তথ্য |
---|---|---|---|
সৈয়দ আবেদ আলী | ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা | ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা | জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন |
শাহরিন আক্তার | ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা | ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা | জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন |
সৈয়দ সোহানুর রহমান | ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা | নথিভুক্ত নয় | জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন |
দুদক জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী ধাপ হিসেবে আসামিদের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।