এক নজিরবিহীন নিরাপত্তা ভঙ্গের ঘটনায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ভুল করে হাজার হাজার আফগান নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে ফেলে, যা তাঁদের জীবন চরম ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। ঘটনাটি ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন এক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ভুলক্রমে আফগানদের কাছে প্রায় ৩৩ হাজার আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্যসহ একটি ডেটাবেস পাঠিয়ে দেন।
এই ফাঁস হওয়া তথ্য এক তৃতীয় পক্ষের হাতে পৌঁছায়, যিনি তা ফেসবুকে প্রকাশ করার হুমকি দেন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেন, তালেবান যদি এই তথ্য সংগ্রহ করতে পারত, তাহলে তালিকাভুক্তদের একে একে হত্যা করা হতো। ফলে এটি কার্যত এক ‘মৃত্যু তালিকায়’ পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্রিটিশ সরকার ‘অপারেশন রুবিফিক’ নামে এক গোপন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে, যেখানে প্রায় ৭ বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আওতায় আফগানিস্তান থেকে জরুরি ভিত্তিতে লোক সরিয়ে আনার জন্য ইতিহাসের অন্যতম বড় ইভাকুয়েশন মিশন চালানো হয়।
ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ব্রিটিশ সরকার ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ‘সুপার ইনজাংশন’ গ্রহণ করে, যার ফলে আদালতের অনুমতি ছাড়া এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ কিংবা আলোচনা নিষিদ্ধ ছিল। যদিও বিচারক চ্যাম্বারলেইন ২০২৪ সালের মে মাসে তা প্রত্যাহার করেন, তবুও কনজারভেটিভ সরকার এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসা লেবার সরকার পুনরায় তা বহাল রাখে।
স্বাধীন পর্যালোচনায় জানা গেছে, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তালেবান কর্তৃক হামলার আশঙ্কা অনেকটাই কমে এসেছে। তবে প্রায় ৯০০ আফগান নাগরিক ইতোমধ্যেই ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, ব্রিটিশ সরকার তাঁদের জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে কোনো ধরনের সতর্কতা দেয়নি এবং বরং বিষয়টি চেপে গিয়েছিল।
এ ঘটনায় সরকারের আইনি ব্যয় প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তালিকায় থাকা অনেকেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে দোভাষী বা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, অথবা ‘আফগান রিলোকেশন স্কিম’-এর আওতায় যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন।
‘দ্য টাইমস’-এর তথ্য অনুযায়ী, র্যাচেল রিভসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুক্তরাজ্যে আফগানদের আনার জন্য ২৫ হাজার জনের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়, যা পরে বাড়িয়ে ৪২ হাজার ৫০০ করা হয়। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৫০০ জন ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। ভবিষ্যতে আরও ৫ হাজার ৪০০ জন পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যদিও বাকিদের বিষয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা নেই।
বিচারক চ্যাম্বারলেইন মন্তব্য করেন, “যে সিদ্ধান্তে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও বিপুল পরিমাণ অর্থ জড়িত, সেটি জনসাধারণ ও সংসদের অজানায় রাখা সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।”
উল্লেখ্য, এখনো ধারণা করা হয়—আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যক্তির কাছে ফাঁস হওয়া তালিকার কপি রয়েছে এবং অন্তত একটি কপি বিপুল অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রিটিশ সরকারের মানবাধিকার নীতিমালা, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।