দেশব্যাপী প্রশাসনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে আটটি প্রস্তাবকে অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার ছয়টি কমিশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করে, যেগুলোর মাধ্যমে সরকারপ্রধানকে নানা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সংবিধান সংশোধন ও বড় সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। তবে যেসব প্রস্তাব প্রশাসনিক উদ্যোগে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে ১২১টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ১৮টি জনপ্রশাসন কমিশনের, যার মধ্যে ৮টি প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের উপযোগী বিবেচনায় আলোচনা হয়।
১. মহাসড়কের পেট্রোল-পাম্পে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে টয়লেট স্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত। পৃথক পুরুষ ও মহিলা টয়লেট বাধ্যতামূলক করা হবে।
২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ ও মতামত অপশন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সব মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ডায়নামিক ও আপডেট রাখতে করণীয় নির্ধারণ করবে। ইন্টারঅপারেবিলিটি সিস্টেমের কাজ আগামী ২ মাসে শেষ করতে হবে।
৩. কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। এক মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে।
৪. এনজিওর মাধ্যমে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা: স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এনজিও ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে।
৫. সব মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত গণশুনানি: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে গণশুনানির পদ্ধতি নির্ধারণে সভা আয়োজন করবে।
৬. তথ্য অধিকার আইন ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট সংশোধন: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সময়াবদ্ধ পরিকল্পনায় আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করবে।
৭. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কমিশনে রূপান্তর: বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চলমান কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্মপরিকল্পনা নেবে।
৮. ডিজিটাল রূপান্তর ও ই-সেবা সম্প্রসারণ: আইসিটি বিভাগ নাগরিক প্ল্যাটফর্মে সব সেবা যুক্ত করে ই-গভর্নমেন্ট শক্তিশালী করতে এক মাসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা জানাবে।
সভায় জানানো হয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিবের তত্ত্বাবধানে গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (GIU) তদারকির দায়িত্বে থাকবে। নিয়মিত এমন বৈঠকের মাধ্যমে বাকি সংস্কারগুলোও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
বর্তমানে সরকারের ৫৪টি মন্ত্রণালয়ে ১,০৬১টি সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা প্রমাণ করে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের প্রশ্নে কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ।