বিদেশে জীবিকার আশায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশি বহু নারী। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছেই স্বপ্নের জীবন বদলে যাচ্ছে দুঃস্বপ্নে। শিকার হচ্ছেন যৌন নিপীড়ন, শারীরিক নির্যাতন এবং মানসিক নিঃস্বতার। দেশে ফিরে কেউ ফিরছেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে, কেউ বা সন্তান কোলে নিয়ে, সমাজে তিরস্কারের শিকার হচ্ছেন এই সাহসী নারীরা, যারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছেন।
এই মানবিক বিপর্যয়ের পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত মানব পাচারকারী চক্র।
তারা ভুয়া কাগজপত্র ও বয়স গোপন করে কিশোরীদের বিদেশে পাঠাচ্ছে।
এই চক্রে জড়িত রয়েছে অন্তত চারজন বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) কর্মকর্তা এবং অর্ধশতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি।
প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশে পাঠানো, ভুয়া পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের গৃহকর্মী হিসেবে দেখানো,
প্রত্যাগত কর্মী হিসেবে পরিচয় দান।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৯ মে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলস্থ বিএমইটি অফিসে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন, সহকারী পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক, সহকারী পরিচালক স্বপন কুমার রায়, সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ, সহকারী পরিচালক মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে যা মিলেছে, দৈবচয়নের ভিত্তিতে রিক্রুটিং এজেন্সির কয়েকটি ফাইল পরীক্ষা করে দেখা যায়,
৮টি পাসপোর্টে নাম সঠিক থাকলেও পারিবারিক বিবরণ ভিন্ন। একাধিক আবেদনকারীর বয়স ছিল ২৫ বছরের নিচে, এমনকি কিশোরী, তবুও তাদের ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়েছে। এসব জালিয়াতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে দুদকের কর্মকর্তারা জানান।
কেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ? গৃহকর্মী, পোশাক শ্রমিক ও অন্যান্য খাতের নারী কর্মীরা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের বড় উৎস। কিন্তু এই নারীরা পাচারের শিকার হয়ে ফিরছেন মানসিক ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায়। শুধু পাচার নয়, পাচারপূর্ব ও পরবর্তী সুরক্ষা ব্যর্থতার দায় রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর।
করণীয়: পাচার প্রতিরোধে বিএমইটি ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কঠোর মনিটরিং দরকার। বিদেশগামী নারী কর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও মানসিক সহায়তা কর্মসূচি চালু করা উচিত। দোষী কর্মকর্তা ও এজেন্সির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নারী পাচার বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ মানবিক ও সামাজিক সংকট।
বিএমইটি-তে দুদকের অভিযান কিছুটা স্বস্তি দিলেও, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য প্রয়োজন আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
এই নারীরাই আমাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি—তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখনই সময়।