
বাংলাদেশ থেকে এক লাখ দক্ষ কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (এনবিসিসি) প্রতিনিধিদল।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এনবিসিসি’র ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
এনবিসিসি হলো ৬৫টিরও বেশি জাপানি কোম্পানির ফেডারেশন, যারা সম্প্রতি দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (MoI) স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য জাপানে বাংলাদেশের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেশন ও কর্মসংস্থানের জন্য কাঠামো তৈরি করা।
এর আওতায় আগামী পাঁচ বছরে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম (TITP) এবং স্পেসিফাইড স্কিলড ওয়ার্কার্স (SSW) কর্মসূচির মাধ্যমে এক লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে জাপানে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জানান, প্রথম ধাপে আগামী বছর দুই হাজার কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর ২০২৭ সালে ছয় হাজার এবং ২০২৮ সালে ১৮ হাজার কর্মী নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে নির্মাণ, সেবা, এভিয়েশন, গার্মেন্টস ও কৃষি খাতে কর্মীর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে। এছাড়া গাড়িচালক, অটোমোবাইল ও রিসাইক্লিং খাতেও নতুন কর্মীর প্রয়োজন বাড়বে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশে খুলনা ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সম্ভাব্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এনবিসিসি প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস প্রশিক্ষণের মান ও ভাষাগত ঘাটতি সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে এনবিসিসি চেয়ারম্যান মিকিও কেসাগায়ামা বলেন, “গত মার্চে আমি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছিলাম, সাত মাসের মধ্যে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা আগামী বছরই দুই হাজার কর্মী নিতে পারব।”
তবে তিনি ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়নের ওপর জোর দেন। এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ভাষা শেখাতে ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়া যেতে পারে। জাপান থেকে শিক্ষক অনলাইনে পড়াতে পারেন বা প্রশিক্ষকদের বাংলাদেশে এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।”
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের নারীদের কঠোর পরিশ্রম ও যত্নশীলতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “কেয়ারগিভিং সেক্টরে বাংলাদেশের নারীরা অনন্য। সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে তারা জাপানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
এনবিসিসি প্রতিনিধিরা জানান, আগামী কয়েক বছরে জাপানে ৪ লাখের বেশি নার্স প্রয়োজন হবে এবং তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নার্স নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
বৈঠকে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সরকার এই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে এবং কর্মী নিয়োগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে। এছাড়া জাপানে কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।