দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া বগুড়ার আলোচিত নেতা তুফান সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাত তিনটার দিকে বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় তাঁর বাড়ি থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তুফান সরকার, যিনি বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতনসহ ২১টি মামলা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত মামলা ছিল ২০১৭ সালের এক ছাত্রী ধর্ষণ মামলা, যেখানে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে সেসময় তিনি কিছু সময় কারাগারে থাকার পর বাদীর সঙ্গে আপস করে মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে এবং গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
দুদকের মামলায় তুফান সরকারকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অবৈধভাবে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকা সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০১৮ সালের মার্চে দুদক থেকে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে, দুদক তুফান সরকারের জমি, বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংকে সঞ্চয়সহ বিভিন্ন অস্থাবর সম্পদ উদ্ধার করে। তাঁর আয়ের বৈধ উৎস কিংবা আয়কর পরিশোধের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, ফলে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
তুফান সরকার ২০২১ সালের ১ এপ্রিল হাইকোর্টে জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন, তবে তথ্য গোপন করে আবার একই বেঞ্চে নতুন জামিন আবেদন করেন। আদালত এই তথ্য গোপনের বিষয়টি জানার পর তা আদালতের নজরে আনা হয়, এবং তুফান সরকারের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
২০১৭ সালে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে, যখন তিনি ওই ছাত্রীর ভালো কলেজে ভর্তির জন্য তাকে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে, তুফান সরকারের সাবেক স্ত্রীর বড় বোন মারজিয়া এবং তুফানের সাবেক স্ত্রী ওই ছাত্রীর মা ও মেয়েকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন এবং তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেন। পুলিশ খবর পেয়ে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে এবং তুফান সরকারসহ অপরাধীদের আটক করে। ওই সময়ে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয় এবং তুফান সরকার দীর্ঘ সময় কারাগারে ছিলেন, তবে পরে বাদীর সঙ্গে আপস করে মুক্তি পান।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) জেদান আল মুসা জানিয়েছেন, “তুফান সরকার দুদকের একটি মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। তিনি এতদিন আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।”
তুফান সরকারের গ্রেপ্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা তার বিরুদ্ধে চলমান মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং তার অপরাধের জন্য দায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার গ্রেপ্তার এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে আশাবাদ ও ক্ষোভ রয়েছে, এবং তারা সুষ্ঠু বিচার আশা করছেন।